HSC

বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অবদান

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র - বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অবদান

সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কারবারের প্রচলন বেশি। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। তার পরেও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ,সম্পদসমূহের সদ্ব্যবহার ও সুষম বন্টনের ক্ষেত্রে অপিরিসীম অবদান রেখেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় নিম্নোক্তভাবে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

  • প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Best utilization of natural resources): বেসরকারি খাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ছেড়ে দেয়া হলে ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা হলে দেশের সকল মানুষ এর সুফল পায়।
  • জাতীয় আয় বৃদ্ধি (Increasing national income): সরকারি মালিকানায় শিল্প-বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে পুঁজিগত সুবিধার কারণে এর দ্রুত উন্নয়ন ঘটে। তদুপরি এরুপ প্রতিষ্ঠানের কর বা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা না থাকায় সহজেই জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ।
  • অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন (Change of economic system): ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা খুশিমতো চলতে দেয়ার নীতির কারণে ধনবাদী সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। তাই এ অবস্থা পরিবর্তন করে সামাজতান্ত্রিক বা মিশ্র অর্থনীতি গড়ে তুলে কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হয় ।
  • ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ (Control of business): দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উপর সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। দেশের আমদানি-রপ্তানির উপরও সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে সরকার এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (Creating of employment opportunity): দেশে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বেকারত্ব হ্রাসের প্রচেষ্টাতেও অনেক সময় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গড়ে তোলা হয়। M.C. Sukla এ সম্পর্কেই বলেছেন “রাষ্ট্রীয় মালিকানায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে এর মাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করা যায়। যা দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত অবস্থা এড়াতে সাহায্য করে।”
  • গবেষণা ও উদ্ভাবন (Research and development): ভোক্তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজন হয় নতুন নতুন পণ্যের। আর এজন্য প্রয়োজন গবেষণার। গবেষণামূলক কাজ সবসময় ব্যয়বহুল। সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সহজেই বাজার গবেষণা ও নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে পারবে।

সরকারী বেসরকারী অংশীদারীত্ব ভিত্তিক ব্যবসা (Public Private Partnership Business)

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায় (PPP) বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে প্রায় ৫০ টি প্রকল্প এই ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় যার মধ্যে ছিল টেলিযোগাযোগ, বন্দর নির্মাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। সরকারও তাদের বাজেট পরিকল্পনায় সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

ছবি: যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ।

সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক (PPP) ব্যবসা বলতে কোন সরকারি সেবা বা বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেটি অর্থায়ন ও পরিকল্পনা করে সরকার এবং এক বা একাধিক প্রাইভেট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায় বলতে বুঝায় পাবলিক কর্তৃপক্ষ এবং প্রাইভেট পক্ষের মধ্যে এমন একটি চুক্তি যেখানে বেসরকারি পক্ষ কোন পাবলিক সেবা দেয় বা প্রকল্পের যাবতীয় আর্থিক এবং কারিগরী ঝুঁকি বহন করে। কিছু কিছু সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসায়ে সেবা ব্যবহারের ব্যয় শুধূমাত্র এর ব্যবহারকারীরা বহন করে কোন কর প্রদানকারী বহন করে না। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী মূলধন বিনিয়োগ বেসরকারি পক্ষ বহন করে এবং সেবা সরবরাহের ব্যয় সম্পূর্ণ বা আংশিক সরকার বহন করে। অনেক সময় সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এককালীন অনুদান প্রদান করে মূলধন ভর্তুকী হিসাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার মুনাফা জাতীয় ভর্তুকী প্রদান করে সাহায্য করে থাকে। মুনাফা জাতীয় ভর্তুকী বলতে একটি নির্দিষ্ট সময় কর সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে GDP এর লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮% – ১০% । এ লক্ষ অর্জনের জন্য সরকার শক্তি উৎপাদন, জ্বালানি, বন্দর, যোগাযোগ, খাবার পানি, বর্জ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী খুঁজছে। কারণ এ প্রকল্পগুলো অত্যধিক ব্যয়বহুল। এগুলো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় । তাই সরকারি-বেসরকারিভিত্তিক (PPP) ব্যবসায় প্রয়োজন।

Content added By
Promotion